بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِِ
১৮ আগস্ট, ২০২৩
জামা’তের কর্মকর্তাদের উপর অর্পিত আমানতের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা
মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, যুক্তরাজ্য
  • সারমর্ম
    এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

    নিখিলবিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম ও আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ১৮ই আগস্ট, ২০২৩ইং তারিখে ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে “জামা’তের কর্মকর্তাদের উপর অর্পিত আমানতের প্রতি বিশ্বস্ত থাকা” বিষয়ক জুমুআর খুতবা প্রদান করেন। প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় জামা’তের কর্মকর্তাদের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেন।


    তাশাহ্‌হুদ, তা’উয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে বলেন, إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا অর্থাৎ নিশ্চয় আল্লাহ্ (তোমাদের) আমানতসমূহ যোগ্য ব্যক্তির ওপর ন্যস্ত করার আদেশ দিচ্ছেন (সূরা আন নিসা: ৫৯)। মহানবী (সা.) বলেছেন, যার প্রতি লোকজনের প্রয়োজনাদি পূর্ণ করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় বা যাকে অভিভাবক বানানো হয় তা তার জন্য এক প্রকার আমানত। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের জামা’তী ব্যবস্থাপনায় যে দায়িত্বই অর্পণ করা হয় তাও প্রত্যেকের কাছে আমানতস্বরূপ।


    হুযূর (আই.) বলেন, সাধারণত নির্বাচনের মাধ্যমে জামা’তী কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। তাই আল্লাহ্ তা’লার নির্দেশ হলো, এমন ব্যক্তিকে নির্বাচিত করো, যে বাহ্যত এ কাজ করার ক্ষেত্রে অধিক দক্ষ এবং নিজের আমানতের সুরক্ষাকারী। নির্বাচনের সময় স্বার্থপরতা বা স্বজনপ্রীতির প্রতি যেন দৃষ্টি না থাকে। কখনো কখনো কেন্দ্র কর্তৃক বা যুগ-খলীফার পক্ষ থেকে সরাসরি কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়ে থাকে আর চিন্তাভাবনা করে সর্বোত্তম ব্যক্তিকেই মনোনীত করার চেষ্টা করা হয়। তবে, কখনো কখনো অনুমানের ক্ষেত্রে ভুলও হতে পারে অথবা দায়িত্ব পাওয়ার পর কারো কারো স্বভাবেও পরিবর্তন এসে যায়; আর বিনয়, পরিশ্রম ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্পৃহা অবশিষ্ট থাকে না। সে যদি এরপর যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করে তাহলে তার ওপরই দোষ বর্তাবে, মনোনয়নকারীর ওপরে নয়। যাহোক, দোয়া করার পর স্বজ্ঞানে নিজেদের মধ্যে সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচিত করার প্রতি আমাদের মনোযোগ থাকা উচিত।


    মহানবী (সা.)-এর হাদীস থেকে জানা যায়, যদি কেউ চেয়ে দায়িত্ব নেয় তার কাজে কল্যাণ থাকে না এবং আল্লাহ্ তা’লা তাকে সাহায্য করেন না। তাই কখনো কর্মকর্তা হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত না। তবে, সেবার প্রেরণা অবশ্যই থাকা উচিত, এটি পছন্দনীয় বিষয়। আর এই সেবার সুযোগ যেভাবেই পাওয়া যায় তা পালনে পরিপূর্ণ চেষ্টা করা উচিত। এ বিষয়টি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের সর্বদা স্মরণ রাখা উচিত। অধিকন্তু নির্বাচকদের ন্যায়ের সাথে মনোনোয়ন বা ভোটাধিকার প্রয়োগ করা উচিত। সাধারণত কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মকর্তাদের অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে। যুগ-খলীফার কাছ থেকে এর অনুমোদন নেয়া হয়ে থাকে। কখনো কখনো সর্বাধিক ভোট পাওয়ার পরও বা জাতীয় পর্যায়ের সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও যদি কারো বিষয়ে কেন্দ্রে কিংবা যুগ-খলীফার কাছে কোনো নেতিবাচক তথ্য থাকে তাহলে তাকে পদাধিকারী নিযুক্ত করা হয় না।


    নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের খেয়াল রাখা উচিত, কখনো পদের আকাংক্ষী বা স্বজনপ্রীতি অথবা বন্ধুত্বের কারণে কিংবা অধিকাংশ মানুষ হাত উঠিয়েছে, তাই আমিও তার পক্ষে হাত তুলবো; এমনটি করা উচিত নয়। এবছর জামা’তী ব্যবস্থাপনার নির্বাচন হবে না, কিন্তু বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নির্বাচন হবে। এসব অঙ্গসংগঠনের যারাই ভোটার হবেন তাদের আল্লাহ্ তা’লার নির্দেশ অনুসারে তাকওয়া ও দোয়ার ভিত্তিতে ন্যায়পরায়ণতার সাথে নাম প্রস্তাব করা উচিত।


    হুযূর (আই.) বলেন, অনুরূপভাবে আমি কর্মকর্তাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই! তাদের সর্বদা এ বিষয়টি স্মরণ রাখা উচিত যে, আল্লাহ্ তা’লা আমাদেরকে সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই সবধরণের ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহ লাভের উদ্দেশ্যে কাজ করে যাওয়া উচিত। অনেক সময় অভিযোগ আসে, কর্মকর্তা হলে তাদের চরিত্র পাল্টে যায়। তাদের আচার ব্যবহারে বিনয় পরিলক্ষিত হয় না। আমি বলছি না যে, তারা অহংকার প্রদর্শন করে, কিন্তু এমন মনে হয যে, সে কর্মকর্তা হওয়ার পর অসাধারণ ব্যক্তি হয়ে গেছে। বিশেষভাবে যেসব কর্মকর্তাকে কেন্দ্র থেকে মনোনীত করা হয়ে থাকে বা কোথাও কোথাও ওয়াকেফে যিন্দেগীদের মাঝেও এমনটি দেখা যায়। রিপোর্ট আসে যে, তারা ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ করে, সালামের উত্তর পর্যন্ত দেয় না। এরূপ আচরণ প্রদর্শনকারীরা নিজেদের সংশোধন করুন এবং বিনয় অবলম্বন করুন। আপনাদেরকে জামা’তের সাধারণ সদস্যদের সেবা করার জন্য মনোনীত করা হয়েছে, অফিসার হিসেবে প্রতাপ দেখানোর জন্য নয়। অনুরূপভাবে কোনো কোনো কর্মকর্তা স্বীয় দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে না। অনেক সময় কেন্দ্রীয় চিঠি বা হুযূরের পত্রের বিপরীতে দীর্ঘ সময় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তাদেরও নিজেদের সংশোধন করা উচিত, নতুবা তাদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে।


    এরপর হুযূর (আই.) বলেন, কর্মকর্তাদের আমি আরো কিছু বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। প্রথমত, নিজেদের মাঝে বিনয় অবলম্বন করুন এবং যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করুন। সর্বদা স্মরণ রাখুন! আল্লাহ্ তা’লা আমাদেরকে দেখছেন। কোনো দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা স্বাধীন হয়ে যাই নি, বরং আমরা আল্লাহ্ তা’লার কাছে ধৃত হওয়ার অধিক নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছি। মানুষ আমাদেরকে নির্বাচিত করেছে, তাই তাদের আস্থার প্রতিদান দেয়া উচিত।


    হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন, অনেক কর্মকর্তা অভিযোগ করে যে, সদস্যরা আমাদের কাজে সহযোগিতা করে না। সদস্যদেরও আবশ্যিকভাবে তাদেরকে সহযোগিতা করা উচিত, কেননা আপনারাই তাকে নির্বাচিত করেছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা নিজেদের উত্তম আদর্শ প্রদর্শন করুন। তরবীয়ত সেক্রেটারী যদি পাঁচবেলা নামায না পড়ে তাহলে অন্যদেরকে নামায পড়ার ব্যাপারে কীভাবে বলতে পারে? অনুরূপভাবে কোনো সেক্রেটারী মাল যদি নিজে ঠিকভাবে চাঁদা না দেয় তাহলে অন্যদেরকে কীভাবে চাঁদা প্রদানের প্রতি উৎসাহিত করতে পারে? যদি সেক্রেটারী তরবীয়ত স্বীয় উন্নত আদর্শ প্রদর্শনের মাধ্যমে, ভালোবাসার সাথে জামা’তের সদস্যদের তরবীয়ত করে তাহলে আমাদের জামা’তে এক প্রকার বিপ্লব সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমাদের সর্বাবস্থায় খোদাভীতির সাথে জীবনযাপন করা উচিত। প্রত্যেক কর্মকর্তার নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে দুই রাকাত নফল নামায পড়া উচিত।


    হুযূর (আই.) বলেন, তরবীয়ত বিভাগ উন্নতি করলে জামাতের ৭০ভাগ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অন্যান্য অঙ্গসংগঠনেরও নিজেদেরকে সক্রিয় করা উচিত। অনেক স্থানে নারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসে যে, কর্মকর্তাদের আচরণ ভালো না। মানুষকে কাছে টানার পরিবর্তে দুরে ঠেলে দেয়া হয়। হুযূর (আই.) বলেন, কিছু লোকের কাছে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব থাকার কারণে এমনটি হয়। লাজনা ইমাইল্লাহ্‌র সদস্যদেরও চিন্তাভাবনা ও দোয়ার মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত যে, কে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারবে? কর্মকর্তাদেরকে আমি এটিও বলতে চাই যে, কর্মকর্তা স্টেজে বসে থাকার জন্য নয়। স্ব স্ব বিভাগের কাজ স্বহস্তে করতে হবে। মহানবী (সা.) বলেছেন, “জাতির নেতা জাতির সেবক হয়ে থাকে”। যে কর্মকর্তা নিজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বীয় দায়িত্ব পালন করে তার ইতিবাচক প্রভাব সাধারণ সদস্যদের ওপর পড়ে।


    পুনরায় হুযূর (আই.) বলেন, কর্মকর্তারা জামা’তের প্রত্যেক সদস্যদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক সৃষ্টি করুন, তাদের সুখ-দুঃখে অংশ নিন। তাদের মাঝে এই অনুভূতি সৃষ্টি করুন যে, জামা’তী ব্যবস্থাপনা সবার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন ও খোঁজখবর নেয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এরূপ না করলে আমরা আল্লাহ্ তা’লার অসন্তুষ্টির কারণ হবো। হাদীসে উল্লেখ আছে, প্রত্যেকে তার অধীনস্তের অভিভাবক এবং প্রত্যেককে তার অধীনস্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে, যাকে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে লোকদের তত্ত্বাবধায়ক বানানো হয় সে যদি তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করে তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করে দেয়া হবে।


    হুযূর (আই.) বলেন, যদি কোনো কর্মকর্তা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করে আর তথাকথিত ভাবে হুযূরের প্রতিনিধি হয়ে বসে থাকে তাহলে সে যুগ-খলীফার বদনামের কারণ হচ্ছে। এসব লোকদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার থাকে না। নতুবা আমিও দোষী সাব্যস্ত হবো। কাজেই, আমিও এস্তেগফার পড়ছি আর এসব লোকও এস্তেগফার করুন এবং নিজেদের সংশোধন করুন। আল্লাহ্ তা’লা আহমদীয়া খিলাফতকে সর্বদা এমন সাহায্যকারী দান করুন যারা নিজেদের দায়িত্ব অনুধাবনের মাধ্যমে নিজেদের কাজ সম্পাদন করবে। শুধুমাত্র কার্যনির্বাহী পরিষদের (আমেলা) সভায় বসে নানারকম কথা বলা আর এটি মনে করা যে, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি তা-ই যথেষ্ট নয়। মানুষের কল্যাণের জন্য পরিকল্পনা করুন, এরপর সে অনুযায়ী আমল করা আবশ্যক।


    পার্থিব প্রয়োজন পূরণের জন্য উমুরে আমা এবং সানাত ও তিজারাত বিভাগ রয়েছে। তাদের সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকে কাজ করে যাওয়া উচিত। জামা’তে এখন রিশতানাতা বিভাগ অনেক দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমস্ত বিভাগ মিলে এক্ষেত্রে কাজ করে যাওয়া উচিত। এক্ষেত্রেও জামা’তের তরবীয়ত বিভাগের সক্রিয় হতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েদের তরবীয়ত ভালো হলে তারা ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দানকারী হবে এবং তারা নিজেদের ধর্মীয় বিষয়কে উন্নত করার প্রতি মনোযোগী হবে। এখন দাজ্জাল সর্বত্র বিস্তার লাভ করছে। অতএব, প্রত্যেক কর্মকর্তাকে প্রথমে নিজের বাড়ির সংশোধন করতে হবে। এরপর বিশ্বব্যাপী সকল জামা’তের দেশীয় ও স্থানীয় আমেলা এবং সাংগঠিনক আমেলাগুলোর এ বিষয়ে অনেক কাজ করা উচিত। তাহলে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে।


    হুযূর (আই.) বলেন, উমুরে আমা’কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অনেকে মনে করেন, উমুরে আমা বিভাগের কাজ হলো, কঠোরতার সাথে শাস্তি দেয়া। কিন্তু সবার এ বিষয়টি জানা উচিত যে. এই বিভাগের অনেকগুলো কাজের মধ্যে কেবলমাত্র একটি হলো, ঝগড়া বিবাদের মিটমাট করা। জামা’তের লোকদের উত্তম কর্মসংস্থান এবং জামা’তের ছেলেমেয়েদেরকে সমাজের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করা এ বিভাগের অন্যতম কাজ। এছাড়া জামা’তের ভেতরে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখাও তাদের দায়িত্ব, কিন্তু তরবীয়ত বিভাগ সক্রিয় হলে তাদের কাজ অনেকাংশে কমে যাবে। যাহোক, উমুরে আমার কাজ কেবল শাস্তি দেয়া নয়, বরং তাদের কাজ হলো মানুষ যেন শাস্তিপ্রাপ্ত না হয় সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।


    হুযূর (আই.) আরো বলেন, কখনো কখনো কর্মকর্তাদের আচরণ দেখে মানুষের হৃদয়ে মন্দ ধারণা সৃষ্টি হয়। কেউ সরাসরি যুগ-খলীফার কাছে অভিযোগ প্রেরণ করলে কেন্দ্র বা উমুরে আমা বিভাগ তাদেরকে জবাবদিহিতা করে যে, আমাদেরকে কেন জানানো হলো না আর সরাসরি কেন হুযূর (আই.)-কে পাঠানো হলো? হুযূর (আই.) বলেন, এখানে কেন্দ্রে জামা’তের সদস্যদের যেসব পত্র আসে তা পড়া হয় এবং দ্রুত কার্যকর করা হয়। কিন্তু যদি কোথাও দেরী হয় তাহলে সেটি তার সংশ্লিষ্ট জামা’তে হয়ে থাকে আর এভাবে কর্মকর্তা, সাধারণ সদস্য এবং যুগ-খলীফার সাথে সাধারণ মানুষের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। যেসব কর্মকর্তার ওপর অভাবীদের সাহায্যের দায়িত্ব রয়েছে তাদেরকে বিশেষভাবে স্মরণ রাখা উচিত যে, নিজেদের দায়িত্ব পালনে যেন কোনো প্রকার আলস্য এবং উদাসীনতা প্রদর্শন না হয়। হাদীসে আছে, যে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি দরিদ্র মানুষের জন্য নিজের দরজা বন্ধ রাখবে আল্লাহ্ তা’লা আকাশে তার প্রয়োজনের সময় দরজা বন্ধ রাখবেন। তাই আল্লাহ্ তা’লাকে ভয় করে মানুষের প্রয়োজন পূর্ণ করার বিষয়ে দ্রুততার সাথে কাজ করা উচিত। যদি কেন্দ্রকে জানাতে হয় তাহলে দ্রুত রিপোর্ট দিন যেন কেন্দ্র যাচাই বাছাই করতে পারে। আবেদন নিয়ে ফেলে রাখা এবং দীর্ঘ সময় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা, অনেক বড় অপরাধ। আরেকটি বর্ণনায় উল্লেখ আছে, মহানবী (সা.) আবু মূসা এবং মুআয বিন জাবাল (রা.)-কে ইয়েমেনের গভর্নর নিযুক্ত করে প্রেরণের সময় উপদেশ দিয়ে বলেন, লোকদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টি করো। কঠোরতা সৃষ্টি করো না। ভালোবাসা ও সুসংবাদ ছড়াও এবং ঘৃণা ছড়াতে দিও না। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে এই উপদেশটি পথপ্রদর্শকরূপী নীতি হিসেবে সর্বদা দৃষ্টিপটে রাখা উচিত।


    প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আ.) বলেন মু’মিন সে যে তার আমানত এবং অঙ্গীকার রক্ষা করে। অতএব কর্মকর্তারা আল্লাহ্ তা’লার ভয়ে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে দায়িত্ব পালন করুন, যুগ-খলীফার সাহায্যকারী হিসেবে এবং সাহায্যপ্রার্থীদের প্রতি সহানুভূতির উদ্দেশ্যে দায়িত্ব পালন করুন। সকল কর্মকর্তার একথা স্মরণ রাখা উচিত যে, আমরা যেন আমাদের অঙ্গীকার এবং ঈমানের সংরক্ষণকারী হই এবং আমদের নিজেদের মধ্যে আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য সৃষ্টিকারী হই। আল্লাহ্ তা’লা আমাদের সবাইকে এর তৌফিক দিন, আমীন।

  • পুর্নাঙ্গ অনুবাদ
বিষয়ঃ
শেয়ার করুনঃ
অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক খুতবা