بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِِ
৩০ অক্টোবর, ২০২০
শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ
মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন
  • সারমর্ম
    এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

    আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ৩০শে অক্টোবর, ২০২০ ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায়ও তিনি হযরত মুআয বিন জাবাল (রা.) এবং হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রা.)’র জীবনের স্মৃতিচারণ বজায় রাখেন।


    তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, গত খুতবায় হযরত মুআয বিন জাবাল (রা.)’র স্মৃতিচারণ করা হচ্ছিল আজ তার অবশিষ্টাংশ বর্ণনা করবো। হযরত মুআয বিন জাবল (রা.) অত্যন্ত দানশীল ও উদার মনের মানুষ ছিলেন, এমনকি ধার-দেনা করেও দান-খয়রাত করতেন; আর এভাবে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পাওনাদাররা যখন ঋণ পরিশোধের জন্য অনেক বেশি চাপ দিতে শুরু করে, তখন তিনি কিছুদিনের জন্য বাইরে বেরোনো বন্ধ করে দেন। পাওনাদাররা গিয়ে মহানবী (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করে ও পাওনা আদায় করে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। মহানবী (সা.) লোক মারফত তাকে ডেকে আনেন। হযরত মুআযের কাছে পুরো বৃত্তান্ত শুনে মহানবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি তার ঋণ মাফ করে দেবে, আল্লাহ্ তার প্রতি কৃপা করবেন। একথা শুনে কয়েকজন তাদের ঋণ মওকুফ করে দেন। কিন্তু এরপরও কয়েকজন তাদের পাওনা আদায়ে অনড় ছিল। মহানবী (সা.) হযরত মুআযের সব সহায়-সম্পত্তি তাদের মধ্যে ভাগ করে দেন এবং হযরত মুআয রিক্তহস্ত হয়ে পরেন, এরপর ঋণ বাকি রয়ে যায়। মহানবী (সা.) তখন হযরত মুআয (রা.)-কে ইয়েমেনের একটি অংশের আমীর নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন এবং বলেন, ‘সম্ভবতঃ আল্লাহ্ সেখানে তোমার ঋণ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করবেন।’ তিনি (সা.) তাকে বিশেষ একটি অনুমতি প্রদান করেন; আমীর হিসেবে তার কাছে যেসব উপহার-উপঢৌকন আসবে, সেগুলো তিনি গ্রহণ করতে পারবেন। অপর এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, মহানবী (সা.) তাকে বাইতুল মালের জন্য আসা এসব উপঢৌকন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করার অনুমতি দেন, এর লভ্যাংশ থেকে তিনি অংশবিশেষ পারিশ্রমিকরূপে গ্রহণ করতেন। এর ফলে কেবল তার ঋণই পরিশোধ হয় নি, বরং তিনি স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী হয়ে যান। তিনি সেখানে অবস্থানকালেই মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেন। তিনি যখন ফিরে আসেন, তখন হযরত উমর (রা.) খলীফা হযরত আবু বকর (রা.)-কে বলেন, তিনি যেন হযরত মুআযকে ডেকে পাঠান এবং তার প্রয়োজনের জিনিসগুলো ছাড়া বাকি জিনিস তার কাছ থেকে ফেরত নিয়ে নেন; কেননা মহানবী (সা.) তো ঋণ পরিশোধের জন্য এই অনুমতি দিয়েছিলেন, এখন তো প্রাচুর্য এসে গেছে। হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে রাজি হন নি; তিনি বলেন, হযরত মুআয যদি স্বেচ্ছায় কিছু ফিরিয়ে না দেয় তাহলে তিনি আদৌ কিছু ফেরত চাইবেন না। হযরত উমর (রা.) গিয়ে হযরত মুআযকে তার নিতান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া বাকি সম্পদ বাইতুল মালে ফিরিয়ে দিতে বললে হযরত মুআয প্রথমে অস্বীকৃতি জানান, কারণ তিনি এসব মহানবী (সা.)-এর অনুমতিতেই লাভ করেছিলেন। পরবর্তীতে যখন তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় হযরত উমর (রা.) তাকে উদ্ধার করছেন, তখন নিজেই গিয়ে সবকিছু ফিরিয়ে দিতে চান। হযরত আবু বকর (রা.) পুরো বৃত্তান্ত শোনেন এবং হযরত মুআয (রা.) স্বেচ্ছায় যা ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন, তা সবই তাকে উপহারস্বরূপ রেখে দিতে বলেন। এক্ষেত্রে হযরত উমর (রা.)’র ভূমিকাও খুব স্পষ্ট; তিনি চাচ্ছিলেন- মহানবী (সা.)-এর পর যিনি খলীফা হয়েছেন, এ বিষয়ে তার সিদ্ধান্তও আবশ্যক।


    হযরত মুআযের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ইয়েমেনের উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে যখন তিনি বাহনে আরোহিত ছিলেন, তখন মহানবী (সা.) পায়ে হেঁটেই তাকে এগিয়ে দিচ্ছিলেন। মহানবী (সা.) তাকে শাসনকার্য পরিচালনা, যাকাত আদায় ও বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন উপদেশ প্রদান করেন, আর এ-ও বলেন, খুব সম্ভব তাঁর (সা.) সাথে মুআযের এটিই শেষ দেখা; হযরত মুআয একথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মহানবী (সা.) তখন মদীনার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলেন, ‘লোকদের মধ্যে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হল মুত্তাকী ব্যক্তি, তা সে যে-ই হোক আর যেখানেই থাকুক না কেন!’ মহানবী (সা.) তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, ‘বিলাসী জীবন যাপন করবে না, কারণ আল্লাহ্‌র বান্দারা বিলাসী জীবন যাপন করে না।’ আমীর হিসেবে যেহেতু তাকে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেজন্য মহানবী (সা.) তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘যদি তুমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হও, তাহলে কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে?’ মুআয (রা.) বলেন, তিনি আল্লাহ্‌র বাণী কুরআন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবেন। মহানবী (সা.) জানতে চান, কুরআনে সিদ্ধান্ত খুঁজে না পেলে কী করবে? মুআয বলেন, তিনি মহানবী (সা.)-এর সুন্নত বা আদর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিবেন। মহানবী (সা.) জিজ্ঞেস করেন, যদি সুন্নতেও কোন সমাধান না পাও? হযরত মুআয (রা.) উত্তর দেন, তখন তিনি নিজের বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে যথাসম্ভব ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তার উত্তর শুনে মহানবী (সা.) যারপরনাই আনন্দিত হন ও আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। হযরত মুআয বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) আমাকে শেষ যে উপদেশ দিয়েছিলেন তা হল, ‘মানুষের সাথে উত্তম ব্যবহার ও সদাচরণ প্রদর্শন করবে।’ প্রসঙ্গতঃ হুযূর (আই.) আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, হায়! বর্তমান যুগের মুসলমানরা মহানবী (সা.)-এর এই উপদেশ থেকে কত দূরে রয়েছে।


    মহানবী (সা.) যখন তাকে পাঠান, তখন ইয়েমেনবাসীদেরও পত্র-মারফত বিভিন্ন উপদেশ প্রদান করেন এবং এ-ও লিখেন, ‘আমি তোমাদের কাছে আমার ঘরের উত্তম ব্যক্তিটিকে পাঠাচ্ছি।’ ইয়েমেনবাসীরাও নিজেদের বুদ্ধি অনুসারে হযরত মুআয (রা.)’র আনুগত্য ও অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন। ইয়েমেনে পৌঁছার পর হযরত মুআয (রা.) তাদের নামায পড়াচ্ছিলেন; তার একটি পায়ে আঘাতের কারণে ব্যথা ছিল, তাই তিনি নামাযে সেই পা ছড়িয়ে রাখেন। মুক্তাদীরাও তার অনুকরণ করেন। নামায শেষে হযরত মুআয (রা.) তাদের বুঝিয়ে বলেন, আনুগত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা সঠিক করেছে, কিন্তু এটি আসলে নামায পড়ার সঠিক রীতি নয়; তিনি অসুস্থতার কারণে অপারগতায় এমনটি করেছেন। হযরত মুআয ৯ থেকে ১১ হিজরী পর্যন্ত ইয়েমেনে অবস্থান করেন, এরপর মদীনায় ফিরে আসেন। পরবর্তীতে তিনি জিহাদে অংশগ্রহণের জন্য সিরিয়া গমন করেন। রোমানদের সাথে যুদ্ধের এক পর্যায়ে যখন মুসলিম বাহিনীর ডানবাহু মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন হযরত মুআয ও তার পুত্র বীরবিক্রমে ও দুর্বার গতিতে আক্রমণ করে রোমানদের সৈন্যব্যূহ ভেদ করে এগিয়ে যান এবং এভাবে মুসলমান বাহিনী পুনরায় সুসংগঠিত হয় এবং অবশেষে জয়ী হয়। সিরিয়ায় অবস্থানকালে একদিন দুপুরবেলা নামাযের সময় আবু ইদ্রিস নামক এক ব্যক্তি মসজিদে এসে হযরত মুআযকে বলেন, ‘আল্লাহ্‌র কসম, আমি আল্লাহ্‌র খাতিরে আপনাকে ভালবাসি!’ হযরত মুআয তাকে দু’বার জিজ্ঞেস করেন যে তিনি আসলেই আল্লাহ্‌র কসম খেয়ে একথা বলছেন কি-না। যখন সেই ব্যক্তি প্রতিবারই আল্লাহ্‌র কসম খেয়ে এই সাক্ষ্য দেন, তখন হযরত মুআয (রা.) তাকে বুকে টেনে নিয়ে বলেন, ‘আনন্দিত হও, কারণ আমি মহানবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি: আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন, ‘আমার খাতিরে যারা পরষ্পরকে ভালোবাসবে, আর যারা আমার খাতিরে একসাথে বসবে, আর যারা আমার খাতিরে একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং যারা আমার খাতিরে একে অপরের জন্য খরচ করবে- তাদের জন্য আমার ভালোবাসা অবধারিত হয়ে যাবে’।


    হযরত মুআয (রা.)’র দু’জন স্ত্রী ছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে সম্পূর্ণ সমতার আচরণ করতেন, কোনও কমবেশি করতেন না। তার উভয় স্ত্রী এবং তার পুত্র আব্দুর রহমান আমওয়াসের প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। হযরত আবু উবায়দাহ্ (রা.)’র প্লেগে মৃত্যুর পর খলীফা হযরত উমর (রা.) তাকেই সিরিয়ার কর্তৃত্ব প্রদান করেন। অবশেষে তিনি নিজেও শাহাদতের জন্য স্বীয় প্রবল আকাঙক্ষার কারণে প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, যা হাদীস অনুসারে শাহাদতস্বরূপ। হযরত মুআয (রা.) ১৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন, মৃত্যুকালে তার বয়স ৩৩, মতান্তরে ৩৪ বা ৩৮ বছর ছিল। তিনি ১৫৭টি হাদীস বর্ণনা করেছেন; বুখারী ও মুসলিম শরীফেও তার বর্ণিত হাদীস লিপিবদ্ধ হয়েছে।


    হযরত উমর (রা.) তার খিলাফতকালে একবার চারশ’ দিনারের একটি থলি কর্মচারী মারফত উপহারস্বরূপ হযরত আবু উবায়দাহ্ বিন জাররাহ্ (রা.)’র কাছে পাঠান ও তাকে দেখে আসতে বলেন যে, আবু উবায়দাহ্ (রা.) সেটি কী করেন। একইভাবে হযরত মুআয বিন জাবাল (রা.)’র কাছেও তিনি সমপরিমাণ অর্থ উপহারস্বরূপ পাঠান। কর্মচারী এসে জানায়, তারা দু’জন হুবহু একই কাজ করেছেন; উপহারের অর্থ চাকরের হাত দিয়ে বিভিন্ন দরিদ্র ব্যক্তির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। হযরত উমর (রা.) তখন বলেন, আসলে তারা দু’জন পরস্পর ভাই-ভাই; এ কারণে দু’জন একই কাজ করেছেন। হযরত উমর (রা.) একবার তার দরবারে উপস্থিত লোকদের নিজ নিজ ইচ্ছার কথা বলতে বলেন; কেউ বলছিল ‘এই ঘরটা হীরে-জহরতে ভরে গেলে আমরা তা আল্লাহ্‌র পথে খরচ করব’; অন্যরাও অনুরূপ বিভিন্ন ইচ্ছার কথা বলছিল। হযরত উমর (রা.)-কে তার আকাঙক্ষার কথা বলতে বললে তিনি বলেন, ‘আমার মন চায়- হায়! এই ঘরটি যদি হযরত আবু উবায়দাহ্, হযরত মুআয বিন জাবাল, হযরত সালেম, হযরত হুযায়ফা বিন ইয়ামানের মত লোক দিয়ে ভরে যেত’ হযরত উমর (রা.) এ-ও বলেছিলেন, যদি তার মৃত্যু ঘনিয়ে আসে এবং হযরত আবু উবায়দাহ্ জীবিত না থাকেন, তবে তিনি হযরত মুআযকে খলীফা নিযুক্ত করে যেতেন; কারণ তিনি মহানবী (সা.)-এর কাছে শুনেছিলেন, কিয়ামত দিবসে হযরত মুআয আলেমদের দলে সর্বাগ্রে থাকবেন।


    এরপর হুযূর (আই.) হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রা.)’র স্মৃতিচারণ আরম্ভ করেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রা.) আনসারদের খাযরাজ গোত্রের শাখা বনু সালামার সদস্য ছিলেন; তার পিতার নাম আমর বিন হারাম ও মাতার নাম রুবাব বিনতে কায়েস। তিনি মহানবী (সা.)-এর মদীনায় হিজরতের প্রায় চল্লিশ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বিখ্যাত সাহাবী হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ তারই সুযোগ্য পুত্র ছিলেন এবং প্রসিদ্ধ সাহাবী হযরত আমর বিন জামূহ্ তার ভগ্নিপতি ছিলেন। তিনি আকাবার দ্বিতীয় বয়আতের সময় সত্তরজন আনসারের সাথে একত্রে ইসলাম গ্রহণ করেন; মহানবী (সা.) আনসারদের জন্য যে বারজন নকীব বা নেতা নির্বাচন করেছিলেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রা.) তাদের অন্যতম ছিলেন।


    প্রাসঙ্গিকভাবে হুযূর (আই.) আকাবার দ্বিতীয় বয়আতের নাতিদীর্ঘ বর্ণনাও তুলে ধরেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রা.) বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ নেন এবং উহুদের যুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন; উহুদের যুদ্ধের দিন তিনি-ই প্রথম শাহাদাতবরণ করেন। সুফিয়ান বিন আবদে শামস তাকে শহীদ করেছিল। হযরত আব্দুল্লাহ্ যুদ্ধে যাওয়ার পূর্বেই স্নেহের পুত্র হযরত জাবেরকে ডেকে নিজের ধারণার কথা বলেছিলেন, তিনি এই যুদ্ধে প্রথমদিকেই শহীদ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করবেন। তিনি হযরত জাবেরকে তার ঋণ পরিশোধ করার দায়িত্ব এবং বোনদের সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়ে যান। একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, উহুদের যুদ্ধের যাত্রাপথে মদীনার মুনাফিক-নেতা আব্দুল্লাহ্ বিন উবাই বিন সলুল যখন নিজের দলবল নিয়ে পিঠটান দেয়, তখন হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর তাকে বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, যদিও সেই চেষ্টা সফল হয় নি। তার ভগ্নিপতি হযরত আমর বিন জামূহ ও ভাগ্নে খাল্লাদও উহুদের যুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন, কিন্তু তার পুণ্যবতী বোন নিজ স্বামী, ভাই বা পুত্রের জন্য চিন্তা বা শোকের পরিবর্তে মহানবী (সা.)-কে নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন। যখন সেই মহান সাহাবীয়া দেখেন যে, মহানবী (সা.) অক্ষত আছেন, তখন তাঁর (সা.) কাছে এসে বলেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি যখন নিরাপদ আছেন, তখন অন্য কারও মৃত্যুতে আমার কোন পরওয়া নেই বা আমার কিছুই যায় আসে না!’ প্রাসঙ্গিকভাবে হুযূর (আই.) এই মহান সাহাবীয়ার উল্লেখ করেন, ইসলামের জন্য যার আত্মত্যাগ পৃথিবীর ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ। হযরত আব্দুল্লাহ্ ও হযরত আমর বিন জামূহ (রা.)’র মধ্যে গভীর হৃদ্যতা ও সুসম্পর্ক ছিল; শাহাদতের মাধ্যমে তাদের এই সম্পর্ক আরও প্রগাঢ় হয়। মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে উহুদের প্রান্তরে তাদের দু’জনকে একই কবরে সমাহিত করা হয়। হুযূর বলেন, তার অবশিষ্ট স্মৃতিচারণ আগামীতে করা হবে, (ইনশাআল্লাহ্)।

  • পুর্নাঙ্গ অনুবাদ