بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِِ
১৩ নভেম্বর, ২০২০
শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ
মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন
  • সারমর্ম
    এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

    আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১৩ই নভেম্বর, ২০২০ ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় তিনি আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রা.) এবং হযরত আবু দজানা (রা.)’র জীবনের স্মৃতিচারণ করেন।


    তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) সাহাবীদের স্মৃতিচারণ আরম্ভ করার আগে দুই খুতবা পূর্বে হযরত মুআয বিন জাবাল (রা.)’র স্মৃতিচারণে উল্লেখ করা মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বলের একটি হাদীস সম্পর্কে বলেন, ঐ হাদীসটির যে অনুবাদ সেদিন উপস্থাপন করা হয়েছিল তা সঠিক ছিল না এবং এর ফলে প্রকৃত বিষয়টি অস্পষ্ট রয়ে গিয়েছিল। এজন্য হুযূর প্রথমে সম্পূর্ণ হাদীসটির সঠিক অনুবাদ উপস্থাপন করেন। ইসমাঈল বিন আব্দুল্লাহ্ বর্ণনা করেন যে, হযরত মুআয (রা.) বলেছেন, “আমি মহানবী (সা.)-কে একথা বলতে শুনেছি, ‘তোমরা সিরিয়া অভিমুখে হিজরত করবে এবং তা তোমাদের হাতে বিজিত হবে; সেখানে তোমাদের মধ্যে এক প্রকার রোগ দেখা দেবে, যা ফোঁড়া বা প্রচণ্ড হুল ফোটানোর মত বিষয় হবে। সেই রোগ মানুষের নাভির নিম্নাংশে প্রকাশ পাবে; এর দ্বারা আল্লাহ্ তা’লা মানুষকে শাহাদত দান করবেন আর তাদের কর্মকে পবিত্র করবেন’।” এই হাদীসে প্লেগের লক্ষণ নাভির নিম্নাংশে প্রকাশ পাবে বলে উল্লেখ রয়েছে, ইতোপূর্বে এর ভুল অনুবাদ করা হয়েছিল।


    উপরোক্ত সংশোধনী উপস্থাপনের পর হুযূর হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন আমর (রা.)’র অবশিষ্ট স্মৃতিচারণ শুরু করেন। হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ (রা.)’র বরাতে জানা যায়, উহুদের যুদ্ধের পর হযরত আব্দুল্লাহ্ (রা.)’র মরদেহ মহানবী (সা.)-এর সামনে আনা হয়, যার নাক-কান কেটে কাফিররা বিকৃত করে দিয়েছিল। হযরত আব্দুল্লাহ্ (রা.)’র কন্যা বা তার বোন ডুকরে কেঁদে উঠলে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কেঁদো না, ফিরিশ্তারা সারাক্ষণ তার ওপরে নিজেদের পাখা দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।’ অপর এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, সেদিন হযরত জাবের (রা.) তার ফুফুর কান্না দেখে নিজেও অশ্রু সংবরণ করতে পারেন নি। অন্যরা তাকে নিষেধ করলেও মহানবী (সা.) তাকে কাঁদতে নিষেধ করেন নি; তবে একথা বলেন, ‘আল্লাহ্‌র কসম! তোমরা তার জন্য কাঁদ বা না কাঁদ, তাকে তোমরা সমাহিত করার আগ পর্যন্ত ফিরিশ্তারা সারাক্ষণ নিজেদের পাখা দিয়ে তাকে ঢেকে রেখেছিল।’ উহুদের যুদ্ধের শহীদদের জানাযা সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমত রয়েছে এবং সেগুলোর মধ্যে অনেক মতভেদও রয়েছে। সহীহ বুখারীতে শহীদদের জানাযা সংক্রান্ত অধ্যায়ে কেবল দু’টি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। প্রথমটি হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ্ (রা.)’র। তিনি বর্ণনা করেন, উহুদের যুদ্ধের শহীদদের দু’জন দু’জন করে একটি কবরে সমাহিত করা হয়; দু’জনের মধ্যে যিনি বেশি কুরআন জানতেন, মহানবী (সা.) তাকে প্রথমে কবরে সমাহিত করতে বলছিলেন। তিনি (সা.) বলছিলেন, কিয়ামতের দিন আমি তাদের সাক্ষী হব। তিনি (সা.) তাদেরকে রক্তরঞ্জিত অবস্থাতেই দাফন করতে বলেন; তাদেরকে গোসলও দেয়া হয় নি আর তাদের জানাযাও পড়া হয় নি। দ্বিতীয় বর্ণনাটি হযরত উকবাহ্ বিন আমের (রা.)’র; তিনি বলেন, মহানবী (সা.) একদিন এসে উহুদের যুদ্ধের শহীদদের জানাযা পড়ান। বুখারী শরীফের অপর একটি হাদীস থেকে জানা যায়, মহানবী (সা.) উহুদের যুদ্ধের আট বছর পর তাদের জানাযা পড়েছিলেন। সুনান ইবনে মাজাহ্, আবু দাউদসহ বিভিন্ন ইতিহাসগ্রন্থে ভিন্ন বর্ণনাও দেখতে পাওয়া যায়; সেগুলোর বিবরণেও মতভেদ রয়েছে। হুযূর (আই.) এরূপ কিছু বিবরণ উদ্ধৃত করে বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করে বলেন, সহীহ বুখারীর বর্ণনাটিই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য; মহানবী (সা.) উহুদের দিন তাদের জানাযা পড়ান নি, বরং পরবর্তীতে নিজের তিরোধানের কিছুদিন পূর্বে একদিন উহুদের প্রান্তরে গিয়ে তাদের জানাযা পড়েন।


    মহানবী (সা.) একদিন হযরত জাবের (রা.)-কে স্বীয় পিতার প্রয়াণে শোকাকুল দেখতে পেয়ে তাকে অসাধারণ একটি সুসংবাদ দেন; মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ্ তা’লা যার সাথেই কথা বলেন, পর্দার আড়াল থেকে বলেন; কিন্তু তোমার বাবার সাথে আল্লাহ্ সামনা-সামনি কথা বলেছেন!’ মহানবী (সা.) আরও বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ্‌র কাছে আল্লাহ্ তার ইচ্ছা জানতে চাইলে আব্দুল্লাহ্ (রা.) বলেন, তিনি পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে এসে আল্লাহ্‌র পথে নিহত হতে চান; যেহেতু এটি আল্লাহ্‌র চিরন্তন রীতির পরিপন্থী, তাই আল্লাহ্ তা’লা সেটি নাকচ করে দেন। তখন আব্দুল্লাহ্ (রা.) নিবেদন করেন যেন এই কথাটি আল্লাহ্ তাদের কাছে পৌঁছে দেন, যাদের তিনি ছেড়ে এসেছেন; এর প্রেক্ষিতেই আল্লাহ্ তা’লা সূরা আলে ইমরানের ১৭০নং আয়াত অবতীর্ণ করেন, যার অর্থ হল: ‘আল্লাহ্‌র পথে যারা নিহত হয়েছে, তাদের তোমরা কখনোই মৃত ভেবো না; বরং তারা জীবিত, তাদেরকে স্বীয় প্রভু-প্রতিপালকের সন্নিধানে রিয্‌ক দেয়া হচ্ছে।’


    হযরত খলীফাতুল মসীহ্ রাবে (রাহে.) মহানবী (সা.)-এর প্রতি সাহাবীদের অকৃত্রিম ভালোবাসার দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে গিয়ে এই ঘটনাটিকে চমৎকারভাবে নিজের এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেছিলেন, যা হুযূর (আই.) উদ্ধৃত করেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ (রা.)’র ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে হযরত জাবের (রা.) মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমে পাওনাদারদের আংশিক ঋণ মওকুফ করার অনুরোধ জানান; কিন্তু পাওনাদাররা অস্বীকৃতি জানালে মহানবী (সা.) হযরত জাবেরকে বলেন, তিনি যেন তার খেজুর বৃক্ষের সব খেজুর পৃথক পৃথক শ্রেণীবিন্যাস করে মহানবী (সা.)-কে ডাকেন; হযরত জাবের নির্দেশ পালন করেন। মহানবী (সা.) খেজুরের স্তুপের মাঝে বসে হযরত জাবেরকে পাওনাদারদের পাওনা অনুসারে খেজুর মেপে মেপে দিতে বলেন; মহানবী (সা.)-এর পবিত্র সত্তার কল্যাণে সবার সব পাওনা পরিশোধের পরও অনেক খেজুর অবশিষ্ট থেকে যায়। হযরত আব্দুল্লাহ্ (রা.) একমাত্র পুত্র জাবের (রা.)-কে ছাড়াও সাতজন বা নয়জন কন্যা রেখে গিয়েছিলেন।


    এরপর হুযূর (আই.) হযরত আবু দজানা (রা.)’র স্মৃতিচারণ করেন; তার প্রকৃত নাম ছিল হযরত সিম্মাক বিন খারশা, কিন্তু তিনি আবু দজানা ডাকনামেই সুপরিচিত ছিলেন। তিনি আনসারদের খাযরাজ গোত্রের শাখা বনু সায়েদার সদস্য ছিলেন; তার পিতার নাম খারশা ও মায়ের নাম ছিল, হাযমা বিনতে হারমালা। হযরত আবু দজানার খালেদ নামে এক পুত্র ছিলেন, যার মা ছিলেন আমেনা বিনতে আমর। মহানবী (সা.) হযরত উতবাহ্ বিন গাযওয়ান (রা.)-কে তার ধর্মভাই বানিয়েছিলেন। হযরত আবু দজানা (রা.) বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন। তিনি আনসারদের শীর্ষস্থানীয় সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি খুবই দক্ষ একজন অশ্বারোহী ছিলেন, যুদ্ধের ময়দানে অত্যন্ত বীরদর্পে লড়াই করতেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি মাথায় লাল রংয়ের রুমাল বা পাগড়ি বাঁধতেন, যা দেখে তাকে চেনা যেত। উহুদের যুদ্ধের দিন তিনি নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে হলেও মহানবী (সা.)-এর সুরক্ষা বিধানের অঙ্গীকার করেছিলেন। তিনি ও হযরত মুসআব বিন উমায়ের (রা.) মহানবী (সা.)-এর সুরক্ষায় বীরদর্পে লড়েছিলেন; এই দায়িত্ব পালনকালে তিনি গুরুতর আহত হলেও হযরত মুসআব (রা.) শাহাদতের অমিয় সুধা পান করেন।


    উহুদের যুদ্ধের দিন মহানবী (সা.) নিজের হাতে একটি তরবারী নিয়ে বলেন, ‘কে এটা আমার কাছ থেকে নিতে চায়?’ হযরত উমর, যুবায়ের ইবনুল আওয়ামসহ অনেক শীর্ষস্থানীয় সাহাবীই সেটি নেয়ার জন্য আবেদন জানান; মহানবী (সা.) তখন শর্ত জুড়ে দেন- যে এটা নেবে, তাকে এর দায়িত্বও পালন করতে হবে। হযরত আবু দজানা (রা.) যখন আবেদন করেন, তখন মহানবী (সা.) তাকে এটি প্রদান করেন। সেই তরবারীর দায়িত্ব সম্পর্কে আবু দজানা জানতে চাইলে মহানবী (সা.) বলেন, এ দিয়ে কোন মুসলমানকে যেন হত্যা করা না হয় এবং কোন একজন মুসলমান অবশিষ্ট থাকাবস্থায় কাফিরদের যেন পৃষ্ঠপ্রদর্শন করা না হয়। হযরত আবু দজানা (রা.) সেই তরবারী নিয়ে বীরদর্পে শত্রুদের মোকাবিলায় অগ্রসর হন; মহানবী (সা.) এটি দেখে বলেন, একমাত্র এরূপ পরিস্থিতি ছাড়া অর্থাৎ যুদ্ধাবস্থা ছাড়া আল্লাহ্ তা’লা এভাবে বীরদর্পে হাঁটা অপছন্দ করেন। হযরত যুবায়ের বিন আওয়াম (রা.) খুবই আশা করেছিলেন, মহানবী (সা.) তরবারীটি তাকে দেবেন; কিন্তু যখন এটি আবু দজানা পেলেন, তখন তিনি ঠিক করেন, তিনি দেখবেন- আবু দজানা (রা.) কীভাবে এই তরবারীর দায়িত্ব পালন করেন! তিনি আবু দজানা (রা.)’র পেছন পেছনই লড়াই করতে থাকেন। তিনি দেখতে পান, আবু দজানা প্রবল বিক্রমে শত্রুব্যূহ ভেদ করে এগিয়ে চলছেন এবং যে কাফিরই তার সামনে পড়ছে, তাকে হত্যা করছেন। এভাবে কাফিরদের হত্যা করতে করতে তিনি কাফির বাহিনীর শেষ প্রান্ত অতিক্রম করে যুদ্ধে উস্কানিদাতা নারীদের কাছে গিয়ে পৌঁছেন। আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ তাকে দেখে আর্তনাদ করে ওঠে; আবু দজানা (রা.) যদিও তাকে হত্যা করার জন্য তরবারী উঠিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তা আবার নামিয়ে নেন। যুদ্ধ শেষে হযরত যুবায়ের (রা.) তাকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে আবু দজানা (রা.) বলেন, কোন অসহায়-দুর্বল নারীকে হত্যা করে আমি মহানবী (সা.)-এর তরবারীর অসম্মান করতে চাই নি। হযরত যুবায়ের (রা.)’র মন প্রশান্ত হয় যে, মহানবী (সা.) যথার্থ ব্যক্তিকেই সেই তরবারীটি দিয়েছেন। হযরত আবু দজানা (রা.) দ্বাদশ হিজরীতে ইয়ামামার যুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করে শাহাদতবরণ করেন। একদা অসুস্থাবস্থায় হযরত আবু দজানা (রা.) তার সঙ্গে থাকা একজনকে বলেছিলেন, “আল্লাহ্ তা’লা হয়তো আমার দু’টো কর্ম কবুল করবেন; প্রথমতঃ আমি কোন বৃথা কথা বলি না; গীবত করি না বা কারও অনুপস্থিতিতে তার সম্বন্ধে নেতিবাচক কথা বলি না; দ্বিতীয়তঃ, কোন মুসলমানের প্রতি আমি হৃদয়ে ঘৃণা বা বিদ্বেষ পোষণ করি না।”


    সাহাবীদের স্মৃতিচারণ শেষে হুযূর (আই.) সম্প্রতি প্রয়াত কয়েকজন নিষ্ঠাবান আহমদীর গায়েবানা জানাযা পড়ানোর ঘোষণা দেন; তদের মধ্যে প্রথম হলেন, পেশোয়ারের শ্রদ্ধেয় শহীদ মাহবুব খান সাহেব, যাকে গত ৮ই নভেম্বর অজ্ঞাত পরিচয় এক দুর্বৃত্ত গুলি করে শহীদ করে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মরহুম নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তেন এবং খুবই তবলীগ-পাগল একজন মানুষ ছিলেন, এজন্য শত্রুদের চক্ষুশূলও ছিলেন। তাই তাকে একটু সতর্ক থাকতে বলা হলে তিনি বলতেন, ‘এখন তো এমনিতেই আল্লাহ্‌র কাছে যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, শাহাদত লাভ করলে তো তা অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয় হবে।’ মরহুমের সহধর্মিনী স্বামীর শাহাদতের মাধ্যমে একাধারে শহীদের কন্যা, শহীদের ভ্রাতুষ্পুত্রি ও শহীদের স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা লাভ করেছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় জানাযা যথাক্রমে পাকিস্তানের মুবাল্লিগ মওলানা ফখর আহমদ ফররুখ সাহেব ও তার ওয়াক্‌ফে নও পুত্র স্নেহের এহতেশাম আব্দুল্লাহ্‌র, যারা গত ১লা নভেম্বর একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মরহুম ১৯৯৬ সালে রাবওয়ার জামেয়া থেকে পাশ করার পর থেকে পশ্চিম আফ্রিকার আইভরিকোস্ট ও পাকিস্তানের বিভিন্ন জামাতে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে জামাতের সেবা করার সৌভাগ্য লাভ করেন। মরহুম সবসময় জামাতের কাজকে নিজের ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ কাজের ওপরও প্রাধান্য দিতেন। তার সুযোগ্য পুত্রও জামাতের অঙ্গসংগঠনের অধীনে বিভিন্ন সেবা করার সৌভাগ্য লাভ করেছে। চতুর্থ জানাযা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রাবওয়া নিবাসী শ্রদ্ধেয় ড. আব্দুল করীম সাহেবের, যিনি গত ১৪ই সেপ্টেম্বর ৯২ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর সাহাবী হযরত মৌলভী মোহাম্মদ আলী সাহেবের পৌত্র ছিলেন। জামাতের বিভিন্ন সেবার পাশাপাশি সুদমুক্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জামাতের যে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়, তাতে সুচিন্তিত পরামর্শ ও পরিকল্পনা প্রদানের মাধ্যমেও অসাধারণ সেবা করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। তিনি কাদিয়ানের তা’লীমুল ইসলাম কলেজের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ করেন আর পরবর্তীতে স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি করেন। তিনি পাকিস্তানকে খুবই ভালোবাসতেন। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে এবং অর্থমন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার সৌভাগ্য লাভ করেন। আর্থিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ইসলামী শিক্ষামালা কি সে বিষয়ে তিনি ঊর্দূ এবং ইংরেজিতে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। ১৯৮৯ সনে অবসর গ্রহণের পর তিনি হযরত খলীফাতুল মসীহ্ রাবে (রাহে.)’র তাহরীকে সাড়া দিয়ে জীবন উৎসর্গ করে তাসখন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ানোর উদ্দেশ্যে উযবেকিস্তান গমন করেছিলেন। এরপর দেশে ফিরে জামাতের সেবার মানসে রাবওয়াতে বসবাস আরম্ভ করেন আর আমৃত্যু জামাতের সেবায় নিবেদিত থাকেন। হুযূর (আই.) প্রয়াতদের সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণে তাদের অসাধারণ গুণাবলী ও বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের কিছু ঝলক তুলে ধরেন এবং তাদের আত্মার শান্তি ও মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন আর তাদের সন্তান-সন্ততিরা যেন তাদের সৎকাজগুলো ধরে রাখতে পারেন সেই কামনা করেন। (আমীন)

  • পুর্নাঙ্গ অনুবাদ