بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِِ
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭
আহ্‌মদীয়াত গ্রহনের ঈমান উদ্দীপক ঘটনা
মসজিদ বাইতুল ফুতুহ্, লন্ডন
  • সারমর্ম
    এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

    নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ১০ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদে “আহ্‌মদীয়াত গ্রহনের ঈমান উদ্দীপক ঘটনা”- বর্ণনা করে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

    তাশাহুদ, তাঊয, তাসমিয়া এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন,

    পৃথিবীতে দেখা যায় যে অধিকাংশ মানুষ ক্রমাগত পার্থিবতায় নিমজ্জিত হয়েই চলেছে; পৃথিবী অর্জনের প্রতিযোগিতাতেই তারা ব্যস্ত; খোদা তা’আলা ও ধর্মকে এর পরে স্থান দেয়া হয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও কিছু মানুষ এমন রয়েছে যারা আল্লাহর সন্ধানে রত এবং সেই ধর্মের সন্ধানে রত যা সত্য এবং যা আল্লাহ পর্যন্ত নিয়ে যায়। তারা সেই সত্যপথ পাবার জন্য বিচলিত ও উদ্বিগ্ন হৃদয়ে দোয়া করে; আর যখন একজন বান্দার অবস্থা এমন হয় তখন আল্লাহ তা’আলাও তাকে সঠিক পথের দিশা দেন, তাকে ঈমান ও একীনে বৃদ্ধি করেন। এই যুগে ধর্মকে বোঝার জন্য আল্লাহ তা’আলা হযরত মসীহ মাওউদ (আ.)-কে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর হাতে বয়াতের নির্দেশ দিয়েছেন। হুযুর (আই.) বলেন, আহমদীয়াতের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এমনটি দেখা গিয়েছে এবং আজও প্রতিদিনই পৃথিবীর কোন না কোন গ্রামে, শহরে বা দেশে দেখা যায় যে যারা আল্লাহর সন্ধানে রত এবং সত্যপথের সন্ধানী, তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা আহমদীয়াতের প্রতি পথনির্দেশনা প্রদান করে এই জামাতে নিয়ে আসেন। আর এসব ঘটনাবলী কেবল নবাগত আহমদীদেরই নয়, বরং পুরনো ও জন্মগত আহমদীদেরও ঈমান বৃদ্ধির কারণ হয়ে থাকে। এরপর হুযুর (আই.) এরকম কতিপয় ঘটনা উল্লেখ করেন।

    গাম্বিয়ার আমীর সাহেব সেখানকার এক বৃদ্ধার ঘটনা উল্লেখ করেন যিনি গত দশ বছর যাবৎ পায়ের ব্যথায় ভুগছিলেন, কোথায় চিকিৎসা করিয়ে আরোগ্য পাচ্ছিলেন না। একবার চিকিৎসার কারণে কোন এক স্থানে গিয়ে তিনি এমটিএ-তে হুযুর (আই.)-এর খুতবা শুনেন। যখন তিনি নিজ গ্রামে ফিরে আসেন তখন স্বপ্নে তাকে বলা হয়, তুমি টিভিতে যাঁকে দেখেছ তাঁর অনুসরণ কর; কেননা তিনি সঠিক ও মুক্তির পথ বাতলে দিচ্ছেন। অতঃপর তিনি বয়াত করেন। আর বয়াতের কিছুদিন পর থেকেই তার পায়ের কষ্ট কমতে থাকে, এভাবে তার ঈমান আরও বৃদ্ধি পায় এবং এখন তিনি পুরো গ্রামে তবলীগ করছেন এবং এই ঘটনা শোনাচ্ছেন।

    বুর্কিনা ফাসোর এক ব্যক্তি জার্মানির জলসার পর বয়আত গ্রহণ করেন। তিনি জানান, একসময় তিনি নিয়মিত জামাতের রেডিও শুনতেন এবং আহমদী না হলেও গ্রামের নেতা হিসেবে আহমদী মোবাল্লেগদের আতিথেয়তা করতেন। পরবর্তীতে যখন মৌলবীরা এটি জানতে পারে তখন তার কাছে এসে তাকে এরূপ করতে বারণ করে দেয় এবং তিনি তা-ই করেন। ঘটনাচক্রে এর কিছুদিন পর এক সফরের সময় তিনি এক আহমদী মসজিদে নামায পড়েন। সেই রাতে তিনি স্বপ্নে তিনি হাজারো মানুষের ভীড় ঠেলে সামনে গিয়ে এক ব্যক্তিকে দেখেন যার চারপাশে সবাই দাঁড়িয়ে ছিল। স্বপ্নে তাকে এ-ও জানানো হয় যে এই ব্যক্তিকেই তার মান্য করা উচিত, কিন্তু মৌলবীর তাঁর কাছে যাওয়া থেকে তাকে বিরত রেখেছে। এরপর তিনি পুনরায় আহমদীদের সাথে যোগাযোগ আরম্ভ করেন। যখন তিনি জামাতের মুরব্বী সাহেবের আমন্ত্রণে মিশন হাউজে গিয়ে এমটিএ দেখেন তখন জলসার সমাপনী অনুষ্ঠান তাতে দেখানো হচ্ছিল। সেই ব্যক্তি তখন মুরব্বী সাহেবকে বলেন, ‘এক্ষুণি আমার বয়আত নিন; আল্লাহর কসম! স্বপ্নে আমি এই দৃশ্যই এবং এই ব্যক্তিকেই দেখেছি!’ পরবর্তীতে এই ব্যক্তি তার পুরো পরিবারসহ আহমদীয়াত গ্রহণ করেন এবং অন্যদেরকেও তবলীগ করছেন। হুযুর (আই.) বলেন, যারা এমন সরাসরি অভিজ্ঞতা ও আল্লাহ তা’আলার পথনির্দেশনার মাধ্যমে আহমদীয়াত গ্রহণ করে, তাদেরকে কেউ ঈমান থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।

    ইসলামের জন্য যারা হৃদয়ে বেদনা রাখেন তাদের দোয়া আল্লাহ তা’আলা কিভাবে কবুল করেন এরকম একটি ঘটনা হুযুর (আই.) বর্ণনা করেন। আইভরি কোস্টের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের এক ব্যক্তি সাইদু সাহেব জানান যে তার দাদার মাধ্যমে সেই গ্রামে ইসলামের আগমন হয়, কিন্তু সময়ের আবর্তে তার কেবল নাম বাকি রয়ে যায়। এটি নিয়ে তার হৃদয়ে খুব দুঃখ ছিল, তাই তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন যেন এমন কোন ব্যবস্থা হয়ে যায় যাতে গ্রামের মানুষের প্রকৃত ইসলামের অনুসরণ করার সুযোগ পায়। কয়েকদিন পরই আহমদী জামাতের প্রতিনিধিদল সেই গ্রামে যায়, জামাতের পরিচিতি তুলে ধরে। এটি সাইদু সাহেবের জন্য খুবই ঈমানোদ্দীপক বিষয় ছিল যে তার দোয়ার ফলে বহু পুরনো একটি মুসলিম গ্রামে ইসলামের পুনর্জীবনের খবর পৌঁছানোর জন্য আহমদীয়া জামাত হাজির হয়েছে। সেবার ৫৫ জন ব্যক্তি আহমদীয়াত গ্রহণ করে। এভাবে আহমদীয়াতের কল্যাণে তারা প্রকৃত ইসলাম পালনের সৌভাগ্য লাভ করছেন। হুযুর বলেন, একদিকে উন্নত বিশ্ব খোদাকে ভুলেই বসে রয়েছে, অন্যদিকে আফ্রিকার সুবিধাবঞ্চিত এক ব্যক্তির ইসলামের প্রতি বেদনার্ত দোয়ার ফলে যে আমাদের মধ্য থেকে ইসলাম হারিয়ে যাচ্ছে; হে আল্লাহ! তুমি কাউকে পাঠাও যে আমাদেরকে ইসলামে প্রতিষ্ঠিত করবে- আল্লাহ তা’আলা মুহাম্মদী মসীহর এক দাসকে সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য পাঠিয়ে দেন। আজ আহমদীয়া জামাতের মাধ্যমেই প্রকৃত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠার কাজ পৃথিবীতে চলছে। তবলীগী জামাত ইত্যাদি দল যদিও ইসলামের নামে কাজ করছে, কিন্তু বস্তুতপক্ষে তারা নিজেদের স্বার্থের পিছনে ছুটছে; এজন্যই তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে কুফরি ফতোয়া দিয়ে বসতেও কুন্ঠাবোধ করে না, তারা ইসলামের আর কি-ইবা সেবা করবে? অতএব, আজ পৃথিবীতে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব প্রকৃতপক্ষে আহমদী জামাতেরই। আর আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং এই কাজ সহজ করে দিচ্ছেন। কাউকে স্বপ্নের মাধ্যমে, কাউকে অন্যকোনভাবে পথনির্দেশনা প্রদান করছেন।

    খুতবার শেষদিকে হুযুর (আই.) দোয়া করেন, আল্লাহ তা’আলা নবাগতদের ঈমান ও বিশ্বাসে সমৃদ্ধ করুন, ঈমানের যে জ্যোতি তাদের হৃদয়ে আল্লাহ প্রজ্জলিত করেছেন বয়আতের পর তারা যেন তাতে আরও উন্নতি লাভ করে, শয়তান যেন কখনো তাদের প্ররোচিত করতে না পারে, আল্লাহ যেন তাদের সর্বদা অবিচল রাখেন; আর আমরা যারা পুরনো বা জন্মগত আহমদী- তাদেরকেও যেন আল্লাহ তা’আলা নিজেদের ঈমানকে বৃদ্ধি করার জন্য ও সবসময় এতে ঔজ্জল্য তৈরির তৌফিক দান করুন, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নিবিড় করার তৌফিক দিন, আমরা যেন কখনো কোন নবাগত আহমদীর জন্য হোঁচট খাবার কারণ না হই, জাগতিক ভোগবিলাস যেন আমাদের লক্ষ্য না হয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি যেন আমাদের লক্ষ্য হয়, আমরা যেন অতি দ্রুত সত্যিকার ইসলামকে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে দেখি। আল্লাহুম্মা আমীন।

  • পুর্নাঙ্গ অনুবাদ
বিষয়ঃ
শেয়ার করুনঃ